Last Update
বিমায় জিএসটি প্রত্যাহার করুন', নির্মলাকে কড়া চিঠি গাদকারির, নেপথ্যে সঙ্ঘ?
বনের অনিশ্চয়তার উপরও ট্যাক্স! প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গাদকারি। তাও মন্ত্রিসভার বৈঠকে নয়। দলে নয়। একটি কড়া চিঠিতে। আর গাদকারির এই চিঠির সরাসরি লক্ষ্য কে? তাঁরই সহকর্মী অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
একক গরিষ্ঠতা হারানো নরেন্দ্র মোদির এখন ঘরে-বাইরে সঙ্কট। একদিকে মহাজোট 'ইন্ডিয়া'র দাপুটে উপস্থিতি।
অন্যদিকে সরকারের মধ্যেই খোলা হাওয়া। মাত্র দু'মাস আগেও যা ভাবা যেত না, এখন সেটাই হচ্ছে। এক মন্ত্রী অন্য মন্ত্রীকে খোলাখুলি পরামর্শ দিচ্ছেন-আম জনতাকে সুরাহা দিন। অর্থমন্ত্রীকে সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গাদকারি চিঠি লিখে বলেছেন, জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের উপর বলবৎ থাকা ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহার করা হোক। নাগপুরের বিমাকর্মীদের সংগঠন ইতিমধ্যেই দেখা করেছেন গাদকারির সঙ্গে। তাঁদের ক্ষোভ একমুখী-বিমা ক্ষেত্রে আম জনতার উপর ট্যাক্সের বোঝা। গাদকারি নাগপুরের এমপি। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের পরই তিনি সরাসরি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। তাঁর সাফ কথা, 'এই অভিযোগ এবং দাবির সঙ্গে আমি সহমত। জীবন ও চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়ামের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। জীবন বিমার প্রিমিয়ামের উপর জিএসটি আদায় করার অর্থ, জীবনের অনিশ্চয়তার উপর ট্যাক্স চাপানো। সেটাই হচ্ছে। যে সাধারণ মানুষ জীবনের অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে স্বজন-পরিজনকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে বিমা করেছেন, তার উপর সরকারের ট্যাক্স চাপানো উচিত নয়।
একইভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও মাথায় রেখে চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়ামের উপর জিএসটি বসানোও মেনে নেওয়া যায় না। এই ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহার করা উচিত।'
গাদকারির এই চিঠিতে সরকারের অন্দর তো বটেই, বিজেপির অন্দরেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। গাদকারি এবং নির্মলা, দু'জনই সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী। প্রতি সপ্তাহে তাঁদের মধ্যে দেখা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। গাদকারি বৈঠকের মধ্যে, বা আলাদাভাবেও অর্থমন্ত্রীকে এই সমস্যার কথা জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। চিঠিতে সরাসরি আম জনতাকে ট্যাক্স-সন্ত্রাস থেকে রেহাই দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। এবং সবচেয়ে বড় কথা, সেই চিঠি ফাঁসও হয়ে গিয়েছে মিডিয়ায়। একে কিন্তু কেউই স্বাভাবিক প্রবণতা বলে মনে করছে না। বরং মনে করা হচ্ছে, এই সবই সরকারের অন্দরে নরেন্দ্র মোদির অথরিটি খর্বের পূর্বাভাস। সরকারের কোনও মন্ত্রী আর এক মন্ত্রীকে চিঠি লিখে আম জনতার জন্য সুবিচার চাইছেন, তিন মাস আগেও এ কল্পনা করা যেত না। কারণ, তেমন কিছু হলে সেই মন্ত্রীর ডানা ছাঁটতে সময় লাগত না মোদির। এবার তা হচ্ছে না। রাজনাথ সিং এবং নীতিন গাদকারির ছায়া সরকারের অন্দরে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এর নেপথ্যে রয়েছে সঙ্ঘ। নীতিন গাদকারির সঙ্গে দেখা করেছে নাগপুরের বিমা কর্মী সংগঠন।
নাগপুরেই আরএসএসের সদর দপ্তর। সুতরাং, তারা যে সঙ্ঘের কাছেও আর্জি জানিয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। অর্থাৎ আর আড়াল আবডাল নয়, সঙ্ঘেরই অঙ্গুলিহেলনে গাদকারি সরাসরি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিমার উপর জিএসটি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে মানুষের আরও একঝাঁক দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে ভাবনাচিন্তা করতে বলেছেন তিনি। তার অন্যতম হল, চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়ামের উপর করছাড়ের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা।
গাদকারি-সঙ্ঘ ফর্মুলা কার্যত প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাভাবিকভাবেই অর্থমন্ত্রীর পক্ষে নীরব থাকা সম্ভব হবে না। আগামী দিনে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এ নিয়ে প্রস্তাব আনতেই হবে। সরাসরি সরকারি নীতি নির্ধারণে তথা সংশোধনে অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদি ছাড়া অন্য এক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ যুক্ত হচ্ছে। এটাই নতুন মোদির তৃতীয় টার্ম!
TOP RELATED