Last Update
SSC মামলার রায়: বাতিল হল ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি, ফেরত দিতে হবে সুদ-সহ বেতনও!
এক্সপ্রেস কলকাতা ডেস্ক: ভোটের মুখে সোমবার SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করা হল। চাকরি হারালেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। শুধু তাই নই, আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে চাকরিহারাদের ফেরত দিতে হবে সুদ-সহ বেতনও। ডিআই এবং জেলাশাসকদের মারফতই বেতন ফেরাতে হবে তাদের।
সোমবার নির্ধারিত সময়মতো সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টে ঘোষণা হল SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়। বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২৮১ পাতার রায়ে মোট ৩৭০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে পুরো প্যানেল ‘নাল আন্ড ভয়েড’। যার ফলস্বরূপ ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিল বলে জানাল আদালত। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরাতে হবে। দিতে হবে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সুদ। শুধুমাত্র সোমা দাস নামে এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি থাকবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট। কারণ, তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তাঁর চাকরি বহাল রেখেছে আদালত।
বেআইনি নিয়োগ আটকাতে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল বলেই আদালতের পর্যবেক্ষণ। ২৩ লক্ষ মোট চাকরি পরীক্ষার্থী। ২০১৬ সালে এসএসসি নিয়োগ শূন্যপদ ২৪,৬৪০টি। কিন্তু ২৫,৭৫৩টি নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়েছিল। অর্থাৎ শূন্য পদের থেকে ১১১৩ জনকে বাড়তি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই নির্দেশের উপর SSC, বিতর্কিত চাকরি প্রার্থীরা স্টে চাইলে তা বাতিল করে দেওয়া হয় ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যারা চাকরি পেয়েছিল তাদেরকে টাকা ফেরানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এসএসসি মামলায় প্রায় আট হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সেই মামলা যায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এসএসসি-র চাকরি বাতিলের মামলা হাই কোর্টে ফেরত পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চকে ছয় মাসের মধ্যে রায় ঘোষণার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। জানা গিয়েছে মাত্র তিন মাসেই শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা করা হয়ছে বেঞ্চের তরফে।
এদিন আদালত রায়ে জানায়, সুপার নিউমেরিক পদ বেআইনিভাবে গড়া হয়েছে। যাঁরা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে। আদালতের নির্দেশ, ‘CBI তদন্ত করবে। প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে। বেআইনিভাবে সুপার নিউমেরিক পোস্ট করে চাকরি পাওয়াদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।’ পাশাপাশি OMR শিট দ্রুত SSC-র সার্ভারে আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য এদিন আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, ‘গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম এবং দশম শ্রেণি, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। বেতন ফেরত দিতে বলা হয়েছে। DI-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে নজর রাখতে।’ এদিন রায়কে কেন্দ্র করে কোনওভাবেই যাতে হাইকোর্ট চত্বরে গোলমাল না বাঁধে সেই জন্য আঁটসাঁট নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল হাইকোর্ট চত্বর।
প্রসঙ্গত, আদালতের রায়র আগে সোমবার সকালে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ পোস্ট করে লেখেন, ‘শিক্ষক চাকরি মামলা। যেখানে ভুল, অন্যায়, ব্যবস্থা হোক। দোষীরা শাস্তি পাক। কিন্তু, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি যেন বাধা না পায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে তাদের চাকরির চেষ্টা করেছে। কিছু অন্যায়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন যোগ্যদের অনিশ্চয়তায় ফেলে না দেওয়া হয়। এদের স্বার্থে যা চেষ্টা দরকার, সরকার করেছে। এদের অবিলম্বে চাকরি দরকার। আশা করি আদালতের রায়ে এই চাকরির জট খুলতে সরকারের চেষ্টা মান্যতা পাবে।’
TOP RELATED