Last Update
সন্দীপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা স্বাস্থ্য দফতরের
আর জি কর কাণ্ডে, রাজ্যের তো বটেই দেশের মানুষের কাছেও বহু প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সেখানকার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সিবিআই তাঁকে লাগাতার জিজ্ঞসাবাদ করে চলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলা দায়ের হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে।
সেই মামলা যাতে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা Enforcement Directorate বা ED তদন্ত করে সেই আর্জি জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে ২টি ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এক, গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট সন্দীপ ও তাঁর পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। আর দুই, গতকালই সন্দীপকে স্বাস্থ্য ভবনে Officer on Special Duty বা OSD'র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনা হচ্ছে, সাধারণভাবে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও অফিসারকে নিয়ে বিতর্ক হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে OSD'র পদে সরিয়ে দেওয়া হয়।
আর জি কর কাণ্ডে প্রথম থেকেই সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি আর জি করে দুর্নীতির অভিযোগে নবান্নের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে সিট পর্যন্ত গঠন করা হয়েছে। তার পরেও কেন এই পদপ্রাতির ঘটনা? বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব হয়েছে আন্দোলনকারী ডাক্তারি পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। যদিও এব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আগেই প্রভাবশালী তত্ত্বের অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। এমনকী গত ৮ অগস্ট মধ্যরাতে আর জি করে ডাক্তারি পড়ুয়া নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পরও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরিবারকে আত্মহত্যার কথা তাঁর নির্দেশেই বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মাও। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পড়ে সন্দীপ যেদিন আর জি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সেদিনই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসানোর অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নবানের মুখেও পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে। আদালতের নির্দেশে সন্দীপ ঘোষকে ১৫ দিনের ছুটিতেও পাঠিয়েছে রাজ্য। সূত্রের খবর, ছুটি থেকে ফিরলে তিনি স্বাস্থ্য ভবনে 'Officer on Special Duty' পদেদায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। যদিও গতকালই সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য। সেই পদের পরিবর্তেই তাঁকে স্বাস্থ্য দফতরের OSD'র পদ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে গতকাল রাতে সন্দীপের একটি মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় সন্দীপের আর্জি ছিল, আর জি কর কাণ্ডে তাঁকে নিয়ে সংবাদমাধ্যম যে সব খবর করছে তাতে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হোক। তিনি এখনও দোষী সাব্যস্ত হননি কোনও ঘটনায়। অথচ তাঁকে নিয়ে এমন ভাবে খবর পরিবেশিত হচ্ছে, যে দেখলে, শুনলে বা পড়লে মনে হবে তিনি আর জি কর কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত। তাই সংবাদমাধ্যম যে সংবাদ প্রকাশ করছে তার ওপরে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক। কিন্তু আদালত তাঁর সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। এই মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে। বিচারপতি জানিয়ে দেন, এই পর্যায়ে সংবাদমাধ্যমের ওপরে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রয়োজন বোধ করছে না আদালত। কোনও নির্দিষ্ট সংবাদ নিয়ে আপত্তি থাকলে মামলাকারী প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ হতে পারেন বা মানহানির মামলা করতে পারেন। তবে আদালত এটাও জানিয়ে দেয় যে, জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত খবরে সন্দীপের 'ভূমিকা' নিয়ে কোনও আগাম সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য প্রকাশ করা যাবে না। জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের কোনও 'অ্যানিমেশন' নাট্যরূপও প্রকাশ করা যাবে না। বস্তুগত সংবাদ পরিবেশন করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা যাবে না।
আদালত সংবাদমাধ্যমকে 'তদন্তকারী সংস্থার' ভূমিকা নিতেও কার্যত নিষেধ করেছে। কোনও বিতর্ক বা আলোচনাসভার ক্ষেত্রে বক্তার মন্তব্য যে সংবাদমাধ্যমের মতামত নয়, সে ব্যাপারেও বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দিতে হবে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, মামলাকারী এমন কোনও তথ্য দেখাতে পারেননি যা থেকে বোঝা যায় যে তাঁকে নিয়ে Media Trail হচ্ছে। মামলাকারী কোনও অভিযুক্ত নন, তাই এখন Media Trail প্রাসঙ্গিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া নিয়েও সংবাদমাধ্যমে এখনও কোনও 'উস্কানিমূলক' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যম যে 'চতুর্থ স্তম্ভের' ভূমিকা এবং মানুষকে সংবাদ পরিবেশনের কর্তব্য পালন করে তাও আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আর জি কর কাণ্ড বিশ্বের নজরে এসেছে, তাই এ ক্ষেত্রে মানুষের সংবাদমাধ্যমের কাছে তথ্য জানার অধিকার আছে বলেও আদালত জানিয়েছে।
TOP RELATED