সন্দেশখালি থেকে একের পর এক যে সমস্ত অভিযোগ সামনে এসেছে, তা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও অব্যাহত। সন্দেশখালির ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI-ও। সেই আবহেই সন্দেশখালি নিয়ে এবার নয়া বিতর্ক। সন্দেশখালি থেকে একটি ভিডিও সামনে এসেছে, যেখানে ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেইনি বলে দাবি করেছেন বিজেপি-র মণ্ডল সভাপতি। ওই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি এক্সপ্রেস কলকাতা, তবে ভিডিওটি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে বিজেপি মণ্ডল সভাপতিকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ক্যামেরার অন্য দিকে আরও কয়েক জনকে কথা বলতে শোনা যায়। ভিডিও-য় যে কথোপকথন শোনা যায়, তা হল, এই আন্দোলনকে ধরে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। শুভেন্দুদা তাঁর লোকজনকে দিয়ে টাকা, মোবাইল পাঠিয়ে সাপোর্ট দিচ্ছেন।
তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিওটি পোস্ট করেছেন। ভিডিও-য় সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কোয়েল। এক্সপ্রেস কলকাতা ওই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি, কিন্তু সেটি সামনে আসার পর বিতর্ক শুরু হয়েছে নতুন করে। কারণ বিজেপি নেতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। অভিযোগ করানো হয়েছে। গোটাটাই শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশ এবং পরিকল্পনামাফিক হয়েছে।
ভিডিও-য় একজনকে বলতে শোনা যায়, "আমাদের বাড়ির বউদের দিয়ে এটা করানো যেত! আমরাই পারতাম না। দাদা সেখানে বাইরের লোক হয়ে তাদের দিয়ে করিয়েছে। তৃণমূলের লোকদের দিয়েই করিয়েছে...শুভেন্দুদা বলেছিলেন, এটা করতে না পড়লে, তাবড় লোকগুলোকে গ্রেফতার না করালে, ওখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। শুভেন্দুদাই পুরোটা নিয়ন্ত্র করতেন। পীযূস এসেছিলেন..."।
ভিডিও-য় গঙ্গাধরকে আরও বলতে শোনা যায়, "আমাকে বলত, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। কী অভিযোগ করতে হবে, বলে দিতেন।" সন্দেশখালির মহিলাদের কী করে রাজি করালেন জানতে চাইলে গঙ্গাধর জানান, গ্রেফতার না করলে সন্দেশখালিতে টেকা যাবে না, বুলেটের আঘাতে শেষ করে দেবে বলে বোঝানো হয়েছিল। তাতেই রাজি হয়েছেন সকলে। প্রথমে রেখা, তার পর বাকিরা অভিযোগ করেন বলে ওই কথোপকথনে উঠে এসেছে। অনেকে থানা-পুলিশ, তদন্তের ভয়ে পিছিয়েও যান বলে শোনা গিয়েছে ভিডিও-য়।
এই ভিডিও নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে তদন্ত করছি আমরা। দেখছি। আমার মনে হয় না এমন কোনও বিষয় আছে। তৃণমূল কোনও ভাবে প্রলোভিত করে এটা করেছে কি না খোঁজ করছি।” রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর বক্তব্য, “যারা বর্তমানে বিরোধী, তারা একটা প্লট তৈরি করেছিল তারা। ওখানে কী কী হয়েছিল, বলেছিল। এটা নিয়ে ভাল করে তদন্ত হওয়া উচিত। এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যদি সমাজকে প্রভাবিত করে কেউ, তাহলে শাস্তি হওয়া উচিত। বিরোধীরা সন্দেশখালির ঘটনাকে নির্বাচন পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে চাইছে। তাই নানা ভাবে প্রলোভিত করছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে অন্যরা খালি সন্দেশখালি সন্দেশখালি করছেন। এর চেয়ে অনেক বড় গটনা ঘটেছে হাথরস, মণিপুরে। ওরা বাংলাকে কলুষিত করতে চাইছে।”
সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “গোটা দেশে এবং রাজ্যে যেখানে অন্যায় হচ্ছে, সেখানে হয় তৃণমূল, নয় বিজেপি, নয়ত দুই দলই যুক্ত আছে।”